Blog Archives - Amar Madrasah - আমার মাদরাসা https://amarmadrasah.com/category/blog/ মাদরাসা শিক্ষার সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ অনলাইন ই-লার্নিং প্লাটফর্ম আমার-মাদরাসা.কম Mon, 14 Mar 2022 07:04:48 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.6.1 https://amarmadrasah.com/wp-content/uploads/2022/03/cropped-ei_1646414966558-removebg-32x32.png Blog Archives - Amar Madrasah - আমার মাদরাসা https://amarmadrasah.com/category/blog/ 32 32 203614153 মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজ https://amarmadrasah.com/muktijuddhe-alem-somaj/ https://amarmadrasah.com/muktijuddhe-alem-somaj/#respond Sun, 13 Mar 2022 10:03:59 +0000 https://amarmadrasah.com/?p=9807 মহান স্বাধীনতার মাসে আমার মাদরাসার ক্ষুদ্র আয়োজন “মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজ”। এর মাধ্যমে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী আলেমদের সম্পর্কে জানতে পারবো। আজকের পর্বের আলেম হলেন যথাক্রমে: ● মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ ● শাহ্‌ সূফি আল্লামা …

The post মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজ appeared first on Amar Madrasah - আমার মাদরাসা.

]]>
মহান স্বাধীনতার মাসে আমার মাদরাসার ক্ষুদ্র আয়োজন “মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজ”
এর মাধ্যমে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী আলেমদের সম্পর্কে জানতে পারবো।

আজকের পর্বের আলেম হলেন যথাক্রমে:

● মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ

● শাহ্‌ সূফি আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী (রাঃ)

মাওলানা আবুল হাসান যশোরী

মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন এছাড়াও ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত ছাত্র জনতার উপর পুলিশী নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে প্রাদেশিক পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসে মহান ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন৷ তিনি মুক্তিযুদ্ধে ২৪৩ দিন আত্মগোপনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তার পরামর্শে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানী হানাদাররা তার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়।

আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী (রাঃ) ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহনের পাশাপাশি মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ এর সান্নিধ্যে লাভ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রভাবিত হন। বিশিষ্টজনেরা বলেন, আল্লামা হাশেমী স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় একজন বড়মাপের আলেম হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ইমামে আহলে সুন্নাত হিসেবে আমৃত্যু উনার বিশেষ পরিচয় ছিল। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখতেন।

তাঁর সম্পর্কে লেখক, গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি বলেন-

‘বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র ইসলামি চিন্তাবিদ, যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, সোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় রাজাকার-আলবদরকে কমিটি গঠনে বাধা প্রধান করে সাফল্য লাভ করেছিলেন।’ (বাঙাল কেন যুদ্ধে গেল, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ২৮৭)

মাওলানা আবুল হাসান যশোরী  এবং তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছেন। তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তার মাদরাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা করে। শহীদ হন ২১ জন। যাদের মধ্যে একজন সম্মানিত আলেম হাবীবুর রহমান, ৫ জন ছাত্র এবং বাকীরা ছিল ওখানে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। মাদরাসা প্রাঙ্গনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর রয়েছে। ওই হামলায় মাওলানা যাশোরী গুলিবিদ্ধ হন।

১৯৭১ এর দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেমসমাজ কেবল ফতোয়া ও সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি পাশাপাশি যুদ্ধেলিপ্ত হয়েছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মোকাবেলায়। হাজার হাজার আলেম নিজ নিজ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সংগঠিত করেছেন। বয়ান বিবৃতি দিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়েছেন যেমন; তেমনি সাহায্য-সহযোগিতাও করেছেন অকুণ্ঠমনে।

The post মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজ appeared first on Amar Madrasah - আমার মাদরাসা.

]]>
https://amarmadrasah.com/muktijuddhe-alem-somaj/feed/ 0 9807
কন্টস্টান্টিনোপল থেকে ইস্তাম্বুল। এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা দিবস। https://amarmadrasah.com/istanbul-victory/ Sat, 29 May 2021 04:00:00 +0000 http://educationwp.thimpress.com/demo-el-3/?p=4516 আজ ঐতিহাসিক ইস্তাম্বুল বিজয় দিবস। কন্টস্টান্টিনোপল থেকে ইস্তাম্বুল। এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা দিবস। সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতেহ যার হাত ধরে স্বপ্নের এই বিজয় অর্জিত হয়েছিল। আজ সেই দিন। আজ ২৯ শে মে… ইস্তাম্বুলের ৫৬৭ তম বিজয় বার্ষিকী।  আজও তুরস্কের অনেক …

The post কন্টস্টান্টিনোপল থেকে ইস্তাম্বুল। এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা দিবস। appeared first on Amar Madrasah - আমার মাদরাসা.

]]>
আজ ঐতিহাসিক ইস্তাম্বুল বিজয় দিবস। কন্টস্টান্টিনোপল থেকে ইস্তাম্বুল। এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা দিবস। সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতেহ যার হাত ধরে স্বপ্নের এই বিজয় অর্জিত হয়েছিল। আজ সেই দিন।

আজ ২৯ শে মে… ইস্তাম্বুলের ৫৬৭ তম বিজয় বার্ষিকী। 

আজও তুরস্কের অনেক পিতামাতা তাদের আদরের সন্তানের নাম ‘মুহাম্মাদ ফাতেহ’ রেখে থাকেন।কেননা এ নামটি ইসলামী ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।উসমানী খিলাফতের সপ্তম খলীফা সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রহ) ছিলেন একজন মুজাহিদ সুলতান ,যাঁর মাধ্যমে নবী করিম (সাঃ) এর এর একটি ভবিষ্যতবাণী সত্য হয়েছে।হযরত বিশর বিন সুহাইম(রাঃ) থেকে সে ভবিষ্যত বাণীটি বর্ণিত হয়েছে-
لتفتحن القسطنطنية فلنعم الأمير أميرها ولنعم الجيش ذلك الجيش
“নিশ্চয়ই তোমরা কন্সট্যান্টিপোল বিজয় করবে।তার আমীর উত্তম আমীর হবে এবং সেই বাহিনী উৎকৃষ্টতম সেনাবাহিনী হবে।”(মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫, হাদীস : ১৮৯৫৭; মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৬০৩, হাদীস : ৮৩৪৯; মুজামে কাবীর, তাবারানী, হাদীস : ১২১৬)

মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের রাজধানী কন্সট্যান্টিপোল জয় করেন।

১৬ই মুহরম ৮৫৫ হিজরী মোতাবেক ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৪৪৫ খৃস্টাব্দে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ (রহ) উসমানী খিলাফতের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন।তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর,কিন্তু অসম সাহস,অতুলনীয় প্রজ্ঞা, নিপুণ রণকৌশল ও গভীর ঈমানী জযবায় অল্প সময়েই তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের ছাড়িয়ে যান।

তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি খিলাফত পরিচালনা করেন।তাঁর শাসনামলে যেমন ইসলামের বিজয়াভিজানে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছিল তেমনি সকল শ্রেণীর ও ধর্মের মানুষ ন্যায়বিচার, জান-মালের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় ও মানবিক অধিকার লাভ করেছিল।প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল ইসলামী শাসনব্যবস্থার সুফল।
সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) এর শাসনামল বিভিন্ন দিক থেকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।তবে যা তাঁকে উম্মাহর হৃদয়ে অমর করে রেখেছে তা হলো কন্সট্যান্টিপোল বিজয়।

সুলতান মেহমেদ বা মুহাম্মাদ ফাতেহ। Image Source: Wikipedia.

ধর্মীয়,রাজনৈতিক ও ভৌগলিক দিক থেকে কন্সট্যান্টিপোল ছিল পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর।খৃস্টীয় তৃতীয় শতক থেকেই তা ছিল বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নগরী।কন্সট্যান্টিপোল নগরীর তিন দিকে জল, একদিকে স্থল।পশ্চিমে বসফরাস প্রণালী,দক্ষিণে গোল্ডেন হর্ণ ও উত্তরে মারমারা উপসাগর।তাই ভৌগলিক দিক অবস্থানের কারণে একে তখন বিশ্বের সুরক্ষিত নগরীগুলোর মধ্যে গণ্য করা হত।এছাড়া নগরীর প্রতিরক্ষাব্যাবস্থাও ছিল অতুন্ত শক্তিশালী। গোটা নগরীর চারপাশে ছিল একাধিক দুর্ভেদ্য প্রাচীর ও সার্বক্ষণিক সশস্ত্র প্রহরা।এসব কারণে কন্সট্যান্টিপোল ছিল সে বিচারে এক অজেয় দুর্গ।এখানে মনে রাখতে হবে যে, সে যুগটা মিসাইল ও যুদ্ধবিমানের যুগ ছল না। তাই উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলোই তখন নগরীর সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট ছিল।

কন্সট্যান্টিপোল যুদ্ধ। Image source: dailysabah.com

কন্সট্যান্টিপোল জয়ের জন্য সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) তৎকালীন বিশ্বের সর্বাধুনিক রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের সবচেয়ে দূর পাল্লার কামান তিনিই তৈরি করেছিলেন।

সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতির যুদ্ধাবস্থায় এই গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ছাড়াও উনার কিছু বিশেষ গুণ ছিলো। উনার জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। তিনি জাহাজ ও কামানের নতুন নতুন ডিজাইন করতেন। তাঁর নকশা করা কামান আধুনিক হাউতজার এর পূর্বসূরি। তিনি তখন এক হাঙ্গেরি নকশাকার সহায়তায় এক জগৎ বিখ্যাত কামান তৈরী করেছিলেন, নাম ভেসিলিকা। ১৯ টন ওজনের এই কামান ১ মাইল দূর থেকে গোলা নিক্ষেপ করে দূর্গের দেয়াল ৬ ফুট পর্যন্ত ভেঙে ফেলতে পারত। এর ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ছিল ১৯ ফুট আর গোলার ওজন ছিল ৬০০ পাউন্ড এর মত। কনস্টান্টিনোপল বিজয়ে এই কামানের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

প্রস্তুস্তি সমাপ্ত করার পর তিনি অভিযান আরম্ভ করেন।তার স্থল বাহিনী নগরীর পূর্ব দিকে অবস্থান নিল এবং নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বসফরাস প্রণালীতে ছড়িয়ে পড়ল।কিন্তু বসফরাস প্রণালী থেকে ‘গোল্ডেন হর্ণে’ প্রবেশ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।কেননা গোল্ডেন হর্নের মুখ শিকল দ্বারা বন্ধ করা দেওয়া হয়েছিল এবং বাইজেন্টাইন রণতরীগুলো সেখানে অবস্থান নিয়ে গোলা নিক্ষেপ করছিল।

প্রচন্ড যুদ্ধের পরও উসমানী নৌবহর গোল্ডেন হর্ন পদানত করতে সক্ষম হল না।অন্যদিকে বন্দর সুরক্ষিত থাকায় বাইজেন্টাইন বাহিনী তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল পূর্বদিকে,সুলতানের স্থল বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য।তাই তাদের শক্তিকে বিভক্ত করার জন্য এবং দুই দিক থেকে একযোগে আক্রমণ করার জন্য উসমানী নৌবহরের গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করা ছিল অপরিহার্য। প্রায় দুই সপ্তাহ অবিরাম যুদ্ধের পরও নৌপথে বিজয়ের কোন লক্ষণ দেখা গেল না।অবশেষে সুওলতান মুহাম্মাদ ফতেহ এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে একমাত্র বিরল ও বিস্ময়কর হয়ে আছে।পাশ্চাত্যের কট্টর ঐতিহাসিকরা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ না করে পারেনি। গিবনের মত ঐতিহাহিকও একে ‘মিরাকল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সুলতান ফাতেহ (রহ),মুজাহিদদের আদেশ দিলেন রণতরীগুলো ডাঙ্গায় তুলে দশ মাইল পথ অতিক্রম করে গোল্ডেন হর্নে নামাতে হবে, এই দীর্ঘ পথ পুরোটাই ছিল পাহাড়ী উঁচুনিচু ভূমি। এর উপর দিয়ে সত্তরটি রণতরী টেনে নেয়া ছিল এককথায় অসম্ভব।কিন্তু সুলতান ফাতেহ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন।

পুরো পথে কাঠের পাঠাতন বিছানো জল, তাতে চর্বি মাখিয়ে পিচ্ছিল করা হল এবং এর উপর দিয়ে রণতরীগুলো টেনে নিয়ে যাওয়া হল।এভাবে টিলা ও পাহাড়ের উপর দিয়ে রাতের মধ্যে সত্তরটি রণতরী তিনি গোল্ডেন হর্ণে প্রবেশ করাতে সক্ষম হলেন।

এই স্থান দিয়ে জাহাজ টেনে নেয়া হয়। Image Source: Wikipedia.

সত্তরটি জাহাজের এই মিছিল সারারাত্রি মশালের আলোতে ভ্রমণ করেত থাকে। বাইজেণ্টাইন সৈন্যরা কন্সট্যান্টিপোলের প্রাচীর থেকে বসফরাসের পশ্চিম তীরে মশালের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ্য করে।কিন্তু অন্ধকারের কারণে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।অবশেষে ভোরের অয়ালো যখন রহস্যের পর্দা উন্মোচন করে দেয়,ততক্ষণে মুহাম্মাদ ফাতেহের সত্তরটি রণতরী ও ভারী তোপখানা গোল্ডেন হর্নের উপরাংশে পৌঁছে গেছে। গোল্ডেন হর্নের মুখে প্রহরারত বাইজেন্টাইন নৌ সেনারা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দেখল যে, উছমানী রণতরীগুলো মৃত্যুদূতের মতো তাদের পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসছে। এই ঘটনা ত্থেকে একটি প্রবাদ তৈরি হলঃ”যখন পানির জাহাজ ডাঙ্গায় চলবে তখন বুঝবে কন্সট্যান্টিপোলের পতন অত্যাসন্ন।”

চূড়ান্ত আক্রমণের আগে সুওলতান মুহাম্মাস ফাতেহ(রহ) বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সট্যান্টিনকে নগরী সমর্পণের পয়গাম পাঠালেন এবং নগরবাসীর জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলেন, কিন্তু সম্রাট তা গ্রহণ করলেন না।এবার সুলতান চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন।

ঐতিহাহিকগণ লেখেন,আক্রমণের আগে সুলতান ফাতেহ(রহ) বাহিনীর অধিনায়কদের তলব করে সকল মুজাহিদিকে এই পয়গাম পৌঁছে দেওয়ার আদেশ করলেন যে,কন্সট্যান্টিপোলের বিজয় সম্পন্ন হলে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর একটি ভবিষ্যত বাণী সত্য হবে এবং তাঁর একটি মুজিজা প্রকাশিত হবে। অতএব কারো মাধ্যমে যেন শরীয়াতের কোন বিধান লঙ্গিত না হয়।গীর্জা ও উপসানালয়গুলোর যেন অসম্মান না করা হয়,পাদ্রী,মহিলা,শিশু এবং অক্ষম লোকদের যেন কোন ধরনের কষ্ট না দেওয়া হয়…।।’

৮৫৭ হিজরীর ২০ জুমাদাল উলার রজনী মুজাহিদগণ দুয়া ও ইবাদাতের মধ্যে অতিবাহিত করেন। ফজরের নামাজের পর সুলতান চূড়ান্ত আক্রমণের আদেশ দিলেন এবং ঘোষণা করলেন যে ,”ইনশাআল্লাহ আমরা যোহরের নামাজ সেন্ট সুফিয়ার গীর্জায় আদায় করব।”

দ্বিপ্রহর পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে ভীষণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে থাকে।কিন্তু বাইজেন্টান বাহিনী অসাধারণ বীরত্বে একটি সৈন্যও শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। অবশেষে সুওলতান তার বিশেষ বাহিনী ইয়ানাচারী বাহিনীকে সাথে করে সেন্ট রোমান্স এর ফটকএর দিকে অগ্রসর হন। ইয়ানাচারী বাহিনীর প্রধান আগা হাসান তার ত্রিশ জন বীর সঙ্গীকে সাথে করে প্রাচীরের উপর আরোহণ করেন।হাসান ও তার আঠার সাথীকে প্রাচীর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। তারা শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।অবশিষ্ট বারোজন প্রাচীরের উপর দৃঢ় অবস্থান করতে সক্ষম হন।তারপর উসমানী বাহিনীর অন্যান্য দলও একের পর এক প্রাচীরে আরোহণ করতে সক্ষম হন। এমনিভাবে কন্সট্যান্টিপোলের প্রাচীরে চন্দ্রখচিত লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়।

বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সট্যান্টিন এতক্ষণ বীরত্বের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিল।কিন্তু সে তার কিছু অসাধারণ বীর যোদ্ধার সাহস হারানোর পর নিরাশ হয়ে পড়ে।সে উচ্চস্বরে বলে-“এমন কোন খৃস্টান নেই কি, যে আমাকে খুন করবে।”
কিন্তু তার আহ্বানে সাড়া না পেয়ে সে রোম সম্রাট(কায়সারদের) বিশেষ পোশাক খুলে দূরে নিক্ষেপ করে,উসমানী সেনাবাহিনীর উন্মত্ত তরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করে সত্যিকার সৈনিকের মত বীরত্বের সাথে লড়তে লড়তে নিহত হয়।তার মৃত্যতে ১১০০ বছরের বাইজেন্টানের সেই রোম সম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে ,যার সূচনা হয়েছিল প্রথম কন্সট্যান্টিনের হাতে এবং বিলুপ্তও হল আরেক কন্সট্যান্টিনের হাতে । তারপর থেকে কায়সায় উপাধিই ইতিহাসের উপখ্যানে পরিণত হয়ে যায়। এভাবে ইহ-পরকালের সর্দার মহানবী(সাঃ) এর এই বাণী সত্যে প্রমাণিত হয়-“কায়সারের ধ্বংসের পর আর কোন কায়সার জন্ম নিবে না।”

আল্লাহ তাআলা তাঁর মুজাহিদ বান্দার কথাকে সত্য করেছেন।জোহরের সময় সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) বিজয়ীর বেশে কন্সট্যান্টিপোল নগরীতে প্রবেশ করেন। ইংরেজী তারিখ হিসাবে দিনটি ছিল ২৯ মে ১৪৫৩ ঈ.।সেন্ট রোমান্সের উপর(বর্তমান নাম TOP KOPY) উসমানী পতাকা উড়ছিল। সুলতান ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে সিদজায় পড়ে গেলেন।

৫৩ দিনের টানা অবরোধ শেষে ১৪৫৩ সালের আজকের এই দিনে (২৯ মে) অটোম্যান সুলতান মেহমেত-২ ফাতিহ কনস্টান্টিনোপল বিজয় করেন এবং নতুন নাম দেন ইস্তাম্বুল!

মহানবী (সাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ,”নিশ্চয় তোমরা একদিন কুসতুনতিনিয়া (কনস্টান্টিনোপল) জয় করবে। সেই বিজয়ী শাসক কতই না উত্তম হবে এবং তার সৈন্যরাও কতই না উত্তম হবে!”(মুসনাদে আহমদ)।

হযরত আমীর মোয়াবিয়া (রাঃ) সর্বপ্রথম কনস্টান্টিনোপল জয়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর মোট ২৩ বার চেষ্টা করেছেন পরের অনেক শাসক। কিন্তু কনস্টান্টিনোপলের তিন লেয়ারের সুরক্ষা প্রাচীর ভেদ করা সম্ভব হয়নি।

অবশেষে, অটোম্যান সুলতান মেহমেত-২ ফাতিহ মাত্র ২১ বছর বয়েসে এই অসাধ্য সাধন করেন! তার সাফল্যের পেছনে ছবিতে দেখানো এই রণকৌশলের গুরুত্ব অপরিসীম! লাল চিহ্নিত পথে জঙ্গল কেটে পথ বানিয়ে আস্ত যুদ্ধ জাহাজ রাতের আধারে টেনে বাইজান্টাইনদের জলসীমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর তাতেই যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে যায় আর অটোম্যান বিজয় সুগম হয়েছিল!

মেহমেত-২ ফাতিহর এই ম্যানুভারটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটেল ম্যানুভারের একটি!

নগরীর অধিকাংশ খৃস্টান সেন্ট সোফিয়ায় আশ্র্য় নিয়েছিল।সুলতান তাদেরকে অভয় দিলেন এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা দান করলেন।
এরপর আযান দেওয়া হল।সাড়ে এগারো শত বছর যাবৎ যেখানে ‘তিন খোদা’র উপাসনা হচ্ছিল সেখানে আজ তাওহীদের ধ্বনি উচ্চারিত হল।সকল ছবি ও মূর্তি সরিয়ে ফেলা হল।মুসলিম বাহিনী জোহরের নামাজ সেন্ট সোফিয়ায় আদায় করল।

সুলতান ফাতেহ(রহ) একে মসজিদে পরিণত করার ফরমান জারি করলেন। কেননা প্রথমত কন্সট্যান্টিপোলের সম্রাট আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল তাই সুলতান এই গীর্জাকে পূর্বাবস্থায় বহাল রাখতে বাধ্য ছিল না। তদুপরি এটি ছিল অর্থডক্স খ্রিস্টানদের কেন্দ্রীয় গীর্জা ।তাই এর সাথে বহু কুসংস্কার ও অলৌকিকতার বিশ্বাস জড়িত হয়েছিল। এই কুসংস্কারের মূলোৎপাটন প্রয়োজন ছিল।

কন্সট্যান্টিপোল বিজয়ের পর সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ(রহ) নগরীর খৃস্টন অধিবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করলেন এবং তাদেরকে তাদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেন।

কন্সট্যান্টিপোল বিজয়ের এই ঘটনার পর কন্সট্যান্টিপোল যা বর্তমানে ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত উসমানী খিলাফতের রাজধানীর রূপ লাভ করে এবং বহু শতাব্দী পর্যন্ত আলমে ইসলামীর মধ্যে তার বিশেষ গুরুত্ব ছিল।

তথ্যসূত্র-
১) জাহানে দিদাহ- শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী (দা বা)
২) Encyclopedia of Islam
৩) wikipedia
৪) ইসলামের ইতিহাস
৫) Encyclopedia of World History
৬) History of Decline & Fall of Roman Empire and History of Christianity- Edward Gibbon
৭)মাসিক আল-কাউসার
৮) লিখা: মাহবুবুর রহমান।
৯) দেলোয়ার হোসেন খান – Defres

The post কন্টস্টান্টিনোপল থেকে ইস্তাম্বুল। এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা দিবস। appeared first on Amar Madrasah - আমার মাদরাসা.

]]>
4516
মসজিদে নববীর দাসী। https://amarmadrasah.com/mosjide-nababir-dashi/ Thu, 15 Apr 2021 22:02:00 +0000 http://educationwp.thimpress.com/demo-el-3/?p=4514 আরব গোত্রের এক দাসী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলো। তার গায়ের রঙ ছিল কালো। উদ্দেশ্য কুফর ও শিরকের পথ ছেড়ে সত্যের পথে চলা। দ্বীন ইসলামের ছায়ায় নিজেকে সুরক্ষিত করা। আল্লাহ ও তার রাসূলের নৈকট্য লাভ করা। রাসূল …

The post মসজিদে নববীর দাসী। appeared first on Amar Madrasah - আমার মাদরাসা.

]]>
আরব গোত্রের এক দাসী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলো। তার গায়ের রঙ ছিল কালো। উদ্দেশ্য কুফর ও শিরকের পথ ছেড়ে সত্যের পথে চলা। দ্বীন ইসলামের ছায়ায় নিজেকে সুরক্ষিত করা। আল্লাহ ও তার রাসূলের নৈকট্য লাভ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করল।

আরজ করল, “ইয়া রাসূলুল্লাহ (দ:)! আমার থাকার কোনো জায়গা নেই। এখন আপনিই ভরসা।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসীকে ফেলে দিলেন না। নিজ হাতে তার জন্য মসজিদে নববীতে একটা তাবু বানিয়ে দিলেন। সেখানেই দাসীটি বসবাস করতো। অবসর সময়ে আসতো মা আয়েশা রা: সঙ্গে গল্প করতে। হযরত মা আয়েশা রা: সঙ্গে যখনই দেখা হতো তখনই দাসীটি বলা শুরু করতো:


ويوم الوشاح من تحاليل ربنا * الا انه من بلدة الكفر انجاني-
“সেই হারের দিনটি আমার রবের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ৷ জেনে রাখুন সে ঘটনা আমায় দিয়েছে মুক্তি কুফরের শহর থেকে।”

মা আয়েশা রা: এই কথা শুনে বারবার অবাক হতেন। ভাবতেন এই মহিলা এভাবে বলছে কেন? একদিন জিজ্ঞেসই করে বসলেন, “কি ব্যাপার, তুমি আমার কাছে বসলেই এ কথাটি বলো কেন?”

দাসী তখন বর্ণনা করল তার অতীত ইতিহাস। দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প। যে দ্বীন তাকে মুক্তি দিবে দুনিয়া এবং আখেরাতের আযাব থেকে।

সে ছিল কোন এক আরব গোত্রের দাসী। তার মালিক তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। সে তার মালিকের সঙ্গেই থেকে গেল। মালিকের বাড়িতে একটি মেয়ে ছিল। মেয়েটি তার গলায় লাল চামড়ার ওপর মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। পথিমধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে সে হারটি অসতর্কতার বসে কোথাও পরে গিয়েছিল। একটা চিল সেই হারটিকে পড়ে থাকা গোস্তের টুকরো মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল।

এদিকে গোত্রের লোকেরা মহা ব্যস্ত হয়ে সেই হারটি খুঁজতে শুরু করল। অনেক খুজাখুঁজি করার পরেও শেষ পর্যন্ত হারটির সন্ধান পাওয়া গেল না। গোত্রে সবচেয়ে গরিব ছিল সেই মহিলাটিই। কাজেই দোষ এসে পড়ল সেই দাসীর ঘাড়েই। তাকে দোষী মনে করে গোত্রের লোকেরা তাকে তল্লাশি শুরু করল। ওরা সেই হারের সন্ধানে এতটাই উত্তেজিত ছিল যে ঐ মহিলার লজ্জাস্থানে পর্যন্ত তল্লাশী চালানো হলো।

দাসীটি কেঁদে ফেলল। চিৎকার করে বলতে লাগল, “আল্লাহর কসম! আমি চুরি করিনি।” তারা তার কথা বিশ্বাস করছিল না। সবাই ধরেই নিয়েছিল যে সেই চুরি করেছে। ঠিক এমন সময় হার নেওয়া সেই চিলটি ওড়ে যেতে যেতে ওই মহিলার বাড়ির সামনে হারটি ফেলে দিল। সকলের সামনেই হারটি এসে পড়ল। গোত্রের সবাই হতভাগ।

মহিলাটি তখন বলল, “তোমরা তো এর জন্যেই আমার উপর দোষ চাপিয়েছিলে। তোমরা আমার সম্পর্কে সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি ছিলাম এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। নিশ্চই আমার রব আমাকে এই পরিক্ষা থেকে উত্তীর্ন করেছেন। সত্য চিনিয়েছেন, মিথ্যার বিনাশ করেছেন।”

এরপরই মহিলাটি সব কিছু ত্যাগ করে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলো। এবং ঘোষণা করল,
“আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই, নিশ্চই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।”

তথ্যসূত্রঃ
বোখারী শরীফ: সালাত অধ্যায়, ২৯৮ নং পরিচ্ছেদ, হাদিস নং: ৪২৬।

লেখকঃ
গোলাম শফিউল আলম মাহিন
শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

The post মসজিদে নববীর দাসী। appeared first on Amar Madrasah - আমার মাদরাসা.

]]>
4514