মসজিদে নববীর দাসী।
আরব গোত্রের এক দাসী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলো। তার গায়ের রঙ ছিল কালো। উদ্দেশ্য কুফর ও শিরকের পথ ছেড়ে সত্যের পথে চলা। দ্বীন ইসলামের ছায়ায় নিজেকে সুরক্ষিত করা। আল্লাহ ও তার রাসূলের নৈকট্য লাভ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করল।
আরজ করল, “ইয়া রাসূলুল্লাহ (দ:)! আমার থাকার কোনো জায়গা নেই। এখন আপনিই ভরসা।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসীকে ফেলে দিলেন না। নিজ হাতে তার জন্য মসজিদে নববীতে একটা তাবু বানিয়ে দিলেন। সেখানেই দাসীটি বসবাস করতো। অবসর সময়ে আসতো মা আয়েশা রা: সঙ্গে গল্প করতে। হযরত মা আয়েশা রা: সঙ্গে যখনই দেখা হতো তখনই দাসীটি বলা শুরু করতো:
মা আয়েশা রা: এই কথা শুনে বারবার অবাক হতেন। ভাবতেন এই মহিলা এভাবে বলছে কেন? একদিন জিজ্ঞেসই করে বসলেন, “কি ব্যাপার, তুমি আমার কাছে বসলেই এ কথাটি বলো কেন?”
দাসী তখন বর্ণনা করল তার অতীত ইতিহাস। দ্বীনের পথে ফিরে আসার গল্প। যে দ্বীন তাকে মুক্তি দিবে দুনিয়া এবং আখেরাতের আযাব থেকে।
সে ছিল কোন এক আরব গোত্রের দাসী। তার মালিক তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। সে তার মালিকের সঙ্গেই থেকে গেল। মালিকের বাড়িতে একটি মেয়ে ছিল। মেয়েটি তার গলায় লাল চামড়ার ওপর মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। পথিমধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে সে হারটি অসতর্কতার বসে কোথাও পরে গিয়েছিল। একটা চিল সেই হারটিকে পড়ে থাকা গোস্তের টুকরো মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল।
এদিকে গোত্রের লোকেরা মহা ব্যস্ত হয়ে সেই হারটি খুঁজতে শুরু করল। অনেক খুজাখুঁজি করার পরেও শেষ পর্যন্ত হারটির সন্ধান পাওয়া গেল না। গোত্রে সবচেয়ে গরিব ছিল সেই মহিলাটিই। কাজেই দোষ এসে পড়ল সেই দাসীর ঘাড়েই। তাকে দোষী মনে করে গোত্রের লোকেরা তাকে তল্লাশি শুরু করল। ওরা সেই হারের সন্ধানে এতটাই উত্তেজিত ছিল যে ঐ মহিলার লজ্জাস্থানে পর্যন্ত তল্লাশী চালানো হলো।
দাসীটি কেঁদে ফেলল। চিৎকার করে বলতে লাগল, “আল্লাহর কসম! আমি চুরি করিনি।” তারা তার কথা বিশ্বাস করছিল না। সবাই ধরেই নিয়েছিল যে সেই চুরি করেছে। ঠিক এমন সময় হার নেওয়া সেই চিলটি ওড়ে যেতে যেতে ওই মহিলার বাড়ির সামনে হারটি ফেলে দিল। সকলের সামনেই হারটি এসে পড়ল। গোত্রের সবাই হতভাগ।
মহিলাটি তখন বলল, “তোমরা তো এর জন্যেই আমার উপর দোষ চাপিয়েছিলে। তোমরা আমার সম্পর্কে সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি ছিলাম এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। নিশ্চই আমার রব আমাকে এই পরিক্ষা থেকে উত্তীর্ন করেছেন। সত্য চিনিয়েছেন, মিথ্যার বিনাশ করেছেন।”
এরপরই মহিলাটি সব কিছু ত্যাগ করে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলো। এবং ঘোষণা করল,
“আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই, নিশ্চই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।”
তথ্যসূত্রঃ
বোখারী শরীফ: সালাত অধ্যায়, ২৯৮ নং পরিচ্ছেদ, হাদিস নং: ৪২৬।
লেখকঃ
গোলাম শফিউল আলম মাহিন
শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।