মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজ
মহান স্বাধীনতার মাসে আমার মাদরাসার ক্ষুদ্র আয়োজন “মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজ”।
এর মাধ্যমে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা প্রদানকারী আলেমদের সম্পর্কে জানতে পারবো।
আজকের পর্বের আলেম হলেন যথাক্রমে:
● মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ
● শাহ্ সূফি আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী (রাঃ)
● মাওলানা আবুল হাসান যশোরী
মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন এছাড়াও ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত ছাত্র জনতার উপর পুলিশী নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে প্রাদেশিক পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসে মহান ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন৷ তিনি মুক্তিযুদ্ধে ২৪৩ দিন আত্মগোপনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তার পরামর্শে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানী হানাদাররা তার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়।
আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী (রাঃ) ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহনের পাশাপাশি মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ এর সান্নিধ্যে লাভ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রভাবিত হন। বিশিষ্টজনেরা বলেন, আল্লামা হাশেমী স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় একজন বড়মাপের আলেম হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ইমামে আহলে সুন্নাত হিসেবে আমৃত্যু উনার বিশেষ পরিচয় ছিল। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখতেন।
তাঁর সম্পর্কে লেখক, গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি বলেন-
‘বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র ইসলামি চিন্তাবিদ, যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, সোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় রাজাকার-আলবদরকে কমিটি গঠনে বাধা প্রধান করে সাফল্য লাভ করেছিলেন।’ (বাঙাল কেন যুদ্ধে গেল, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ২৮৭)
মাওলানা আবুল হাসান যশোরী এবং তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছেন। তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তার মাদরাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা করে। শহীদ হন ২১ জন। যাদের মধ্যে একজন সম্মানিত আলেম হাবীবুর রহমান, ৫ জন ছাত্র এবং বাকীরা ছিল ওখানে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। মাদরাসা প্রাঙ্গনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর রয়েছে। ওই হামলায় মাওলানা যাশোরী গুলিবিদ্ধ হন।
১৯৭১ এর দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেমসমাজ কেবল ফতোয়া ও সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি পাশাপাশি যুদ্ধেলিপ্ত হয়েছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মোকাবেলায়। হাজার হাজার আলেম নিজ নিজ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সংগঠিত করেছেন। বয়ান বিবৃতি দিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়েছেন যেমন; তেমনি সাহায্য-সহযোগিতাও করেছেন অকুণ্ঠমনে।